বইয়ের নামঃ একাত্তরের সাবিহা।
লেখকঃ মো. রেজাউল করিম।
প্রকাশকঃ জলধি।
প্রকাশকালঃ ডিসেম্বর ২০২০।
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৩১।
মূল্যঃ ৩৫০।
“একাত্তরের সাবিহা” উপন্যাসের ব্যাতিক্রম দিক হলো মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানটা ফুটে উঠেছে উজ্জ্বলতরভাবে। ১৯৭১ সালকে কেন্দ্র করে রচিত অধিকাংশ বইয়ে নারীদের দেখা যায় অসহায় অবস্থায় অথবা অনুপ্রেরণা দানকারীর ভূমিকায়। এই উপন্যাসে সাবিহাকে সাহসী ভূমিকায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাবিহার ভূমিকা ছিলো গোয়েন্দাবৃত্তি। উপন্যাসে প্রথম শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয় ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যার তান্ডবে রোকেয়া হলের সাতজন শিক্ষার্থীর আত্মগোপন।
সাবিহা শিক্ষিত বিচক্ষণ একটা মেয়ে। উর্দু,ইংরেজি, বাংলা তিনটি বিষয়েই দক্ষতা থাকার দরুণ পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে একমাত্র বাঙালি হয়েও টাইপিস্ট হিসেবে চাকরি গ্রহণ করে সে। আর এর সুবাধে তথ্য সংগ্রহ করে যা পরবর্তীতে মুক্তিবাহিনীর নিকট পৌছে দেয়।
সাবিহার মুক্তিবাহিনীর নিকট তথ্য পাচারের প্রতিটি প্রক্রিয়াই ছিলো শ্বাসরুদ্ধকর।
উপন্যাসের এক পর্যায়ে সাবিহার উভয় সংকট পরিলক্ষিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের গোয়েন্দা সেটা ছিলো গোপনে, প্রকাশ্যে সে ছিলো পাকিস্তানি বাহিনীর অফিসের কর্মচারী। দেশ স্বাধীন হলে মুক্তি বাহিনী মেরে ফেলবে পাকিস্তানি দালাল ভেবে আর সত্য জানলে পাকিস্তানিদের দ্বারা নির্যাতিত হতে হবে।
নানা ঘটনার দোলাচালে সাবিহা ৭ ডিসেম্বর অর্থাৎ কুষ্টিয়ার চূড়ান্ত যুদ্ধের আগেই ধরা পরে যায়। অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তা বয়োজ্যেষ্ঠ লে.হাশমি মেয়েতুল্য স্নেহ করতো সাবিহাকে, অপরদিকে মেজর মিশ্র বোনের মর্যাদা দিয়েছিলো। দুজনের বিশ্বাস ভঙ্গের পরিণতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিলো নাকি নেয় নি, সাবিহা কি পেরেছিলো তার সম্ভ্রম রক্ষা করতে! নানা চিন্তায় উপন্যাসের এই পর্যায়ে পাঠক মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত রেজাউল করিমের “একাত্তরের সাবিহা” উপন্যাস পড়তে গিয়ে মনে হলো অক্ষরের জালে বুনা এ যেনো কোন রহস্য গাথা। উপন্যাসের প্রতিটি অক্ষরে যেনো বারুদের গন্ধ, মুহুর্মুহু গুলির ঝংকার, বুটের শব্দ, অজানা আশংকায় অদ্ভূত সব চাপা কষ্ট। আরও রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা, লোভাতুর চাহনি, বিনিদ্র রজনী। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে মনে হয় প্রধান নারী চরিত্র সাবিহা যেনো আমি নিজেই। দেশ মাতৃকার বিজয়ের লক্ষে আমার যত প্রচেষ্টা।
একেকটা তথ্য পাচারে সাবিহার সাথে পাঠকের বুকের ধুকপুকানি জানান দিবে ১৯৭১ এ জন্ম না নিয়েও আমাদের অন্তরে এই গভীর অনুভূতি তৈরি লেখকের লেখনীর বিশেষ ক্ষমতার ফল।
আমার জানা মতে “একাত্তরের সাবিহা” ১৯৭১ এর প্রেক্ষাপটে প্রথম কোন নারীপ্রধান চরিত্র নিয়ে রচিত উপন্যাস।
১৯৭১ এর এক ব্যাতিক্রম রূপ নিয়ে রচিত এই উপন্যাস আমি মনে করি অবশ্যই সকলের পড়া উচিত।
[ বই-পুস্তক-প্রকাশনা এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের যে কোনো সংবাদ প্রকাশের জন্য আমাদের ই-মেইল করতে পারেন : desherboi@gmail.com ]