প্রকাশিত হচ্ছে খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান এর উপন্যাস উজানবাঁশি। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব রাজু। ৪২৬ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৭৫০ টাকা।
উপন্যাসটি সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান বলেন, একজন ঔপন্যাসিকের সব উপন্যাসই কি শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে? মোটেই না। মনে হচ্ছে, এ যাবৎ যে কটি উপন্যাস লিখেছি সেগুলোর মধ্যে উজানবাঁশিকে আপাতত শ্রেষ্ঠ বলতে পারি। কেউ যদি আমার একটিমাত্র উপন্যাস পড়তে চান, তবে উজানবাঁশির কথাই বলব।
বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে এত এত মিথ বা লোকপুরাণ ছড়িয়ে আছে যে, কখনো কখনো মনে হয় গোটা দেশটাই মিথের এক মস্ত কূপ। মিথের সঙ্গে এখানকার মানুষের বসবাস। তারা মিথ সৃষ্টি করে, মিথ যাপন করে, মিথে আনন্দ লাভ করে, মিথে শাসিতও হয়। মিথকে কথাসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। এই উপাদানের প্রাসঙ্গিক ব্যবহার রয়েছে উজানবাঁশি উপন্যাসে।
তিনি জানান, উপন্যাসটির অন্যতম প্রধান চরিত্র আবু তোয়াব, শৈশবে যাকে বাঘে গিলে ফেলেছিল, চল্লিশ বছর যে বাঘের পেটে ছিল, চল্লিশ বছর পর বাঘ যাকে উগরে দিয়েছিল। সবসময় সে ন্যাংটা থাকে। তীব্র শীতেও কিছু গায়ে দেয় না। পায়ের কাছে সাপ নিয়ে বসে থাকে, ব্যাঙের মতো জলের ওপর হাঁটতে পারে, ঈগলপাখির ঠ্যাং ধরে উড়তে পারে। ধীরে ধীরে বাঘামামা নামে সে হয়ে ওঠে প্রণম্য। তার অলৌকিক কর্মকাণ্ডের কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মৃত্যুর পর তার সমাধিক্ষেত্রে ওঠে মাজার। প্রতি বছর ওরস হয়। বাংলাদেশ-ভারত থেকে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ আসে। প্রসাদ হিসেবে খায় খিচুড়ি-মাংস। বাঘামামা বদলে দেয় নীলাক্ষি-তীরের জনপদের সংস্কৃতি।
উজানবাঁশি কি শুধু মিথকেন্দ্রিক উপন্যাস, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা নয়। মিথ ব্যবহার হয়েছে ঠিক ততটুকু, যতটুকু ডিমান্ড করেছে কাহিনি। বাঘামামার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আরও অনেক চরিত্র। যেমন উজানগাঁর ভূস্বামী অনাদি দত্ত, দেখতে যিনি অবিকল রবীন্দ্রনাথ, যিনি রবীন্দ্রনাথের মতোই আলখাল্লা পরেন, রবীন্দ্রনাথের মতোই মাথার চুল, মুখের দাঁড়িগোফ। কিংবা মাওলানা আবদুল কয়েদ, যিনি উজানগাঁর সর্বজন মান্য ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঘামামাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, মানুষ কি চল্লিশ বছর বাঘের পেটে থাকতে পারে? ধীরে ধীরে তিনি শরিয়তপন্থা থেকে উত্তীর্ণ হন মারেফত তথা আধ্যাত্মিকতায়। একদিন মাটি খুঁড়তে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন একটি শিলাখণ্ড, যেখানে লেখা গীতার শ্লোক : ‘ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে।’ অর্থ্যাৎ, এই জগতে চিন্ময় জ্ঞানের মতো পবিত্র আর কিছু নেই। তার পুত্র মোহন রেজা, যার গায়ে ভেসে বেড়ায় বুনো কলমির ঘ্রাণ, ঘুমে-জাগরণে যে শুনতে পায় হট্টিটি পাখির ডাক, শিলালিপির বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুরু করে জ্ঞান অন্বেষণ। কিন্তু বাঘামামা বলেন, ‘জ্ঞান হলো দূষণ। জ্ঞান ত্যাগ করো। নির্মল হও, বিশুদ্ধ হও।’
তিনি আরও জানান, উপন্যাসে আছে অন্ধ বাঁশিওয়ালা শেকা। ভরা পূর্ণিমা রাতে মানুষ, পশুপাখি আর কীটপতঙ্গরা জেগে থাকে তার বাঁশির সুরে। ময়ূরমুখো নৌকায় চড়ে নীলাক্ষির ঘাটে ঘাটে গল্পের আসর জমিয়ে তোলেন রহস্যপুরুষ মোখেরাজ খান। দত্তপরিবার দেশান্তরী হওয়ার পর নিশিমহলে শুরু হয় সাপের বসতি। সেই কবে নীলাক্ষির কুমে ডুবে যাওয়া অনাদি দত্ত আলখাল্লা পরে ঘুরে বেড়ান পথে-প্রান্তরে, দেখা দেন মানুষের স্বপ্নে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে সুড়ঙ্গ পথ ধরে কি বায়ুবেলুনে চড়ে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক কুতুব বকশি। আছে আরও অনেক চরিত্র। বাস্তবতা ও কুহকের মিশেলে মূলত বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের সমাজ ও রাজনীতি, রক্ষণশীলতা ও উদারপন্থা, জ্ঞান ও নির্জ্ঞান এবং বহুমাত্রিক সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব নিয়ে রচিত উপন্যাস উজানবাঁশি।
ইতোমধ্যেই অনলাইনে বইটির প্রি-অর্ডার শুরু হয়েছে। বইমেলার মতোই ২৫% ছাড়ে বইটি দেশের বই বুকশপ-এ পাওয়া যাচ্ছে । ০১৬১১৩২৪৬৪৪ নম্বরে ফোন করে উপন্যাসটি বুকিং দেওয়া যাবে।