দেশের বইয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি শিশু-সাহিত্যিক – আপন অপু-এর
প্রশ্ন ১। প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
প্রথম বই ‘আম কুড়ানোর দিন’ প্রকাশ হয়েছে ২০১৬ তে। তখন খুবই ছোট ছিলাম (এখন যে বড় তাও নয়), অনেক কিছুই বুঝতাম না। লেখালেখিতেও অনেক কাঁচাই ছিলাম। কিন্তু আমার একটা বই হোক তার খুব ইচ্ছা ছিল। বই হোক এই ইচ্ছা আসলে লেখালেখি শুরুর দিক থেকেই ছিল।
কয়েকটা গল্প বাছাই করলাম বইয়ের জন্য, আর তা দেখালাম কবি বশিরুজ্জামান বশির ভাইকে। তিনি পছন্দ করলেন গল্পগুলো। নিজ খরচে তার ‘রাতুল গ্রন্থপ্রকাশ’ থেকে বই প্রকাশ করলেন। পাণ্ডুলিপি প্রকাশককে বুঝিয়ে দেয়ার পর থেকেই বই হাতে পাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেল। প্রতিমুহূর্তে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলাম। অরূপ মজুমদারকে দিয়েছেন অলঙ্করণের জন্য। অলঙ্করণ কেমন হচ্ছে তা দেখার জন্য অরূপ দার বাসায়ও চলে গিয়েছি। ২০ ফেব্রুয়ারি সারারাত কাদের বাবু ভাইয়ের সাথে বইমেলা বুলেটিনের কাজ করেছি। ভোরে প্রকাশনীর প্রেসে যাই আর একুশের প্রভাতে হাতে পাই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পরশ। বর্তমানে বইটির পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে ছোটদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বাবুই’।
প্রশ্ন ২। লেখালেখির ইচ্ছেটা কেনো হলো?
মহান হওয়ার জন্য, অমর হওয়ার জন্য। কবি সাহিত্যিকদের মৃত্যুর পরও পাঠ্য বইয়ে কবি/সাহিত্যিকদের লেখা পড়ে আমার মনে জাগলো লেখালেখির ইচ্ছা। ভাবলাম মরে গেলেও বেঁচে থাকা যায় লেখালেখির মাধ্যমে। তাই লেখালেখির চেষ্টা শুরু। বলছি ক্লাস সেভেন-এইটে থাকাকালীন কথা।
প্রশ্ন ৩। লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
মজার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। তবে একটি ঘটনা আমার চিরজীবন মনে থাকবে। দুপুরবেলা বইমেলায় লোকজন খুব কম। আমি রাতুল গ্রন্থপ্রকাশের স্টলে বসা। একটা বাচ্চা আর তার মা এসেছে বই কিনতে। অনেকগুলো বই নেড়েচেড়ে, উল্টিয়েপাল্টিয়ে আমার ‘আম কুড়ানোর দিন’ বইটাই পছন্দ করলো এবং বইটা কিনেই নিলো।
আমার খুব লোভ হচ্ছিলো যে আমি বলি বইটা আমার লেখা। অতঃপর লোভ সংবরণ করতে না পেরে বলেই ফেললাম- বইটা আমার লেখা। বাচ্চা মেয়েটা আমার দিকে একদৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। তারপর একবার বইয়ের ফ্ল্যাপের ছবি দেখে একবার আমার দিকে তাকায়। তারা ততোক্ষণ খেয়াল করেনি বইয়ের স্টলেও আমার ইয়া বড় বড় দুইটা ছবি ঝুলছে। বাচ্চার মা বাচ্চাকে দেখালো এই যে দেখো ওখানেও উনার ছবি আছে, মেয়েটা দেখলো। যেন তার ঘোর কাটছে না। তারপর বাচ্চার মা জানালো তার মেয়ে কোনো দিন লেখক দেখেনি। তার অনেক ইচ্ছা ছিল একবার লেখক দেখা। মেলায় আসতে আসতেও মাকে বলেছে- ‘মা মেলায় গেলে লেখক দেখতে পাব’? তারপর বইটা এগিয়ে দিয়ে অটোগ্রাফ চাইলো। এতোক্ষণ, বাচ্চা মেয়েটা ঘোরে ছিল, এবার আমি নিজেই ঘোরে পড়ে গেলাম। মনে হলো আমার লেখক জীবন ধন্য। লেখক হিসেবে আমার এর চেয়ে বড় পাওয়া আর নেই, হয়তো কখনো হবেও না।
সেই মিষ্টি মেয়েটার নাম ‘দক্ষিণা’। আমার লেখক জীবনে ওকে আরেকবার দেখার খুব ইচ্ছা। জানিনা আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হবে কি না কখনো!
প্রশ্ন ৪। বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
ভবিষ্যত কেমন হবে তা আসলে নির্ভর করে লেখক আর পাঠক রুচির উপর। লেখকদের যেমন সচেতন হওয়া উচিত তেমনি পাঠকদেরও। সময়ের সাথে সাথেই মানুষের রুচিবোধে পরিবর্তন আসে। সব সময় পাঠক নতুন কিছু চায়, ব্যতিক্রম কিছু চায়। পাঠকের সেই চাহিদা গুরুত্ব দিতে হবে। আর পাঠক এখন শুধু বাংলাদেশ কিংবা ভারতের গণ্ডির ভেতরে নেই। আমেরিকা-লন্ডনে নতুন কী বই প্রকাশ হলো, সেই বইও বাংলাদেশের পাঠকদের হাতে তড়িৎগতিতেই চলে আসে। তাই বিশ্বসাহিত্যের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সাহিত্যের মানোন্নয়ন করতে হবে। আর লেখায় অবশ্যই নিজস্বতা থাকতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে। তবে অর্থনৈতিক বিবেচনায় লেখালেখির ভবিষ্যৎ যে খুব একটা ভালো নয় তা সবারই অনুমেয়।
প্রশ্ন ৫। লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?
শিশুসাহিত্য চর্চা করছি, শিশুসাহিত্য চর্চা করে যাব। নানান ব্যস্ততা আর অলসতায় নিয়মিত লিখতে পারি না, নিয়মিত লেখার চেষ্টা করব। আর স্বপ্ন যদি বলি- শিশুসাহিত্যের ভাণ্ডারে কিছু দিয়ে যেতে চাই। সেই লেখাটি লিখতে চাই, যেটা লেখার পর আমার আর লেখালেখি না করলেও চলবে।
দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com