॥ মাহবুব মোর্শেদ ॥
লেখকদের জন্য সবচেয়ে ভালাে সরকারি চাকরি বা শিক্ষকতা।
এটা অবশ্য আমি শুরুর দিকে বুঝি নাই।
গল্পকার ও ঔপন্যাসিকদের জন্য সরকারি চাকরি খুব ভালাে। তবে যারা রাজনৈতিক চিন্তা করেন, তাদের জন্য বেশ রিস্কি।
স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাকরিও বেশ ভালাে। কিন্তু কলেজের চাকরি তো সরকারি চাকরিই। এখন যেসব বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে সেগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ এত বেশি যে সেগুলোতে থেকে ঠিক চিন্তার স্বাধীনতা সহকারে লেখালেখি করা কঠিন।
কিন্তু সরকারি চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় পড়ার জন্য ভালাে সময় পাওয়া যায়। লেখার জন্যও ভালাে সময় পাওয়া যায়।
কিন্তু সরকারি কাজে মাথা খুলে চিন্তা করা বোধহয় কঠিন। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের মাথায় সরকারি দায়িত্ববোধ বেশ কাজ করে।
কর্তৃত্ববাদী কাঠামোতে প্রত্যেক লেখককেই সরকার কী ভাববে চিন্তা করে লিখতে হয়। কিন্তু, এটা সরকারি চাকরিতে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্ভবত এমন চাপ খুব কম। ফলে, রাজনৈতিক চিন্তামূলক লেখা তাদের জন্য সুখকর হতে পারে।
আমি শুরু থেকে মনে করেছি, শিক্ষক হবো না। আমার দুজন শিক্ষক বলেছিলেন, পড়াশোনায় একটু মন দাও। তোমার মতো শিক্ষক দরকার। আমি তাদের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। আমার তখনকার প্যাটার্নটা অবশ্য হেসে উড়িয়ে দেবার মতোই ছিল। আমার রেজাল্ট শিক্ষকতার ধারে কাছ দিয়ে যায়নি।
বিসিএস বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত ছিল পাকা। বিসিএস দেবো না এটা ছিল কঠোর সিদ্ধান্ত। তবু নানা কারণে, বেশ চাপের মুখে আমি লোক দেখানোর জন্য একবার বিসিএস পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। অনেকের সাথে দেখা হয়েছিল পরীক্ষা দিতে গিয়ে।
আমি ভেবেছিলাম, হয় অ্যাডফার্মে চাকরি করবো, নয়তো পত্রিকায়। অ্যাডফার্মের ওভার স্মার্ট ব্যাপারটা দেখে ওদিকে আর ভিড়িনি। পত্রিকায় ঢুকে গেছি।
তাছাড়া মার্কেজও বলেছিলেন, সাংবাদিকতা হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চাকরি। আগে লেখকরা প্রচুর সংখ্যায় সাংবাদিক হতেন বাংলাদেশেও।
পত্রিকায় চাকরিতে নানা সুবিধা। স্বাধীনভাবে চিন্তা করা যায়। ফিকশন লেখার কথা যদি কেউ ভাবেন, তবে সাংবাদিকদের মতো গল্পের আইডিয়া অন্যদের মাথায় থাকে না। সবকিছু পলিটিকালি দেখার প্রবণতা যাদের আছে তারা অন্তত চিন্তা করতে পারেন। সমাজ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকে। ফলে, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে সাংবাদিকদের অনেক সুবিধা।
বিশ বছর আগেও আমরা শিক্ষক না হবার বা সরকারি কর্মকর্তা না হবার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম। কারণ যাই হোক, আমাদের মতো অনেকেই এমন ভাবতো।
এখন কেউ বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি পেলে পত্রিকায় নিউজ হচ্ছে। আগে গ্রামে কেউ বিএ এমএ পাশ করলে তাকে দশগ্রামের লোক দেখতে আসতো। এখন বিসিএস পাশ করলে ঘটা করে সংবাদ ছাপা হচ্ছে।
এর মানে হলো, আমাদের সমাজে সবার ওপরে আবার আমলাতন্ত্রের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে ফিরে যাচ্ছি আমরা।