উপন্যাসের প্লট রচিত হয়েছে ১৯৬৮-১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সময়কে কেন্দ্র করে। এই উপন্যাসের সূচনা ঘটে এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। যেখানে একজন মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি, পরিবারের কর্তা। অন্য সকল মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো এ পরিবারেও দেখা যায় তার একার আয়ের উপর সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। ঢাকা শহরে নিজের একটা জমি থাকলেও সেখানে বাসা করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই।
মেয়ে মধুরিনা, ছেলে বুলন এবং ছোট মেয়ে ফারিয়া। মধুরিনা দেখতে অনেক সুন্দর, পরিপাটি। সংসার নিয়ে যার অনেক চিন্তা। বড় মেয়ে হওয়ায় সংসারের আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে জানার অধিকার রাখে। ফারিয়াটা অংকে ভীষণ ভালো। ভাই বুলেনের রুমেই সে অংক করে ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে। অংকে ভালো বলে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর সখ।
মধুরিনার বাড়িতে তারা পাঁচ সদস্য বাদেও মুনির সুলতানের অবাধ বিচরণ চলে। মুনির সুলতান একজন বিপ্লবী আদর্শে বিশ্বাসী মানুষ। বুলনের বন্ধু হওয়ার খাতিরে প্রায়ই আসে তাদের বাড়িতে। আলোচনা, আড্ডা চলতে থাকে অনেক সময়। সেই আলোচনায় মধুরিনার আগ্রহ না থাকলেও কিশোরী ফারিয়ার আগ্রহ প্রচুর।
মধুরিনা, ফারিয়া, বুলন এই তিনজনের সাথে তিন রকম সম্পর্ক মুনির সুলতানের। সে মধুরিনার পছন্দের মানুষ, ফারিয়ার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু এবং বুলনের বন্ধু ও সহযোদ্ধা। মুনিরের রাজনৈতিক সচেতনতা ও কর্মকাণ্ডই তাকে আন্দোলনের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে নিয়ে যায়। ছাত্র জীবনেই ব্যক্তিগত জীবন ও প্রেমের ক্ষেত্রে উদাসীন, নিরস কাঠখোট্টা হিসেবে পরিচিত মুনির আদর্শবাদী ছাত্রনেতা থেকে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ধাক্কায় একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মীতে পরিণত হয়।
কী হয় মুনিরের শেষ পরিণতি? বুলনের, ফারিয়ার পরিণতি? মধুরিনা ও মুনিরের সম্পর্কেরই বা কী হয়? জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে বইটি।
জহিরুল ইসলামের লেখা এবং তার সম্পর্কে পূর্বে কিছুই জানতাম না। অগ্নিসাক্ষীই আমার প্রথম পড়া এবং এ যাবত শেষ পড়া। তার লেখা সম্পর্কে কোনো আলোচনা সোশাল মিডিয়াতে পাইনি। তাই বইটা পড়া শুরু করি খুব আগ্রহ নিয়ে। উপরে পাঠ সংক্ষেপ পড়ে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন এটা ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ের প্লটে তৈরি। এমনকি লেখক বইটি প্রকাশ করেন ১৯৬৯। যেটা ছিল গণঅভ্যুত্থানের সময়ে। লেখক যেহেতু নিজেও রাজনৈতিক মানসিকতার ছিলেন এবং উপন্যাস প্রকাশে হয় আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সময়ে। তাই স্বভাবতই সেখানে উঠে আসবে তখনকার সময়ের সচিত্র রূপ।
উপন্যাসে দেখানো পরিবারটা ছিল সাধারণ একটা পরিবার। যেটা আমাদের সমাজে অনেক দেখা যায়। লেখক পারিবারিক সম্পর্ক, তখনকার সময় সাধারণ পরিবারগুলোতে কী কী পরিবর্তন, ধারণা আসতে পারে তা এত সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন যে, পড়তে গিয়ে সকল চিত্র যেন চোখের সামনে ভাসছে। একমাত্র বাবার যৎসামান্য আয়, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, দায়িত্ববোধ ছেড়ে মিটিং মিছিলের পিছনে বুলনের আগ্রহী কর্মকাণ্ড, ফারিয়ার পরিবর্তন, মুনির-রিনার সম্পর্ক সব যেন চোখের সামনে ঘটছে। বিশেষ করে লেখকের লেখার ধরন, শব্দ বিন্যাস এবং ভাষাশৈলী অসাধারণ। লাইনগুলো ভাবায়।
একটা সাধারণ পরিবারকে কেন্দ্র করে হলেও উপন্যাসটা মোটেও সাধারণ না। এখানে দেখতে পাওয়া যাবে ছাত্র আন্দোলনের আদর্শ কর্মীদের ত্যাগ, তাদের দেশ-দেশের মানুষদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা। আরো দেখতে পাওয়া যাবে এন্টি প্রার্থীদের মনোভাব, তাদের কর্ম।
বই : অগ্নিসাক্ষী
লেখক : জাহিরুল ইসলাম
প্রকাশনা : নান্দনিক
পৃষ্ঠা : ৯৮
মুদ্রিত মূল্য : ১৫০টাকা
প্রচ্ছদ : খালিদ আহসান