লেখক তার বইয়ে চিন্তার, মননের, সৃজনশীলতার প্রতিফলন ঘটান। তিনি যা বলতে চান, পাঠককে যা বোঝাতে চান তা তার মত করে বলেন। কাজটা সহজ নয়।
কিন্তু একজন পাঠক বইটা পড়ার পর লেখকের ভাবনাকে নিজের মধ্যে ধারণ করে। নিজের অনুভূতির সাথে লেখকের ভাবনার সম্মিলন ঘটিয়ে তারপর রিভিউ লিখে। এক্ষেত্রে দুটো লাইন লেখার আগে তাকে বারবার ভাবতে হয় তার অনুভূতির সাথে লেখকের ভাবনা কোন রকম অন্তর্দন্ধে লিপ্ত হচ্ছে কি না। তার লেখায় লেখককে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কি না৷ এই বই আলোচনা বা বুক রিভিউ লেখা কাজটাও মোটেও সহজ নয়।
আমি মূলত নেগেটিভ বুক রিভিউ লেখার বিষয়টা এড়িয়ে যাই। বইটা পড়ে একবার সময় নষ্ট করেছি, রিভিউ লিখতে গিয়ে আবার সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নই আমি। অনেকে বলেন, নেগেটিভ রিভিউ লেখকের জন্য পাথেয়। তা হয়তো ছিলো একসময়, এখন নেগেটিভ রিভিউও একপ্রকার প্রচার। আমি অপরিপক্ক লেখকের প্রচারে বিশ্বাসী নই। পাঠক টাকা দিয়ে অপরিপক্ক লেখকের বই না কিনলে, তেল দিয়ে মাথায় তুলে না রাখলে হয়তো তার বোধোদয় হবে। বুঝতে পারবে নিজের দূর্বলতা, হয়তো নিজেকে আর একটু উপযোগী করায় মনোনিবেশ করবে।
তবে পজেটিভ রিভিউ লেখার লোভ সংবরণ করি না। ভালো বই পড়লে বন্ধুদের তা জানাতে কার্পণ্য করি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, পজেটিভ রিভিউ লেখককে অনুপ্রেরণা দেয়। পাঠক হিসেবে রিভিউ লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম। বই পড়া আমার আত্মার খোরাক। রিভিউ লেখা বিষয়টা আমার মনের আনন্দ। কাজটা আমি আন্তরিকতা থেকে করি, আবেগ থেকে করি।আন্তরিকতার বিনিময়ে আমি আমি আন্তরিকতা এবং ভালোবাসা প্রত্যাশা করি। আবেগের বিনিময়ে জাগতিক কোন লোভনীয় বস্তুর প্রত্যাশা করি না।
তাই বুক রিভিউ প্রতিযোগীতায় ল্যাপটপ, মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ পুরষ্কারে পক্ষপাতি নই আমি। বই আলোচনার উপহার বই ছাড়া অন্যকিছু গ্রহণ করে আমার শুদ্ধতম আবেগকে কলুষিত করতে চাই না।
আমার বন্ধুতালিকার অধিকাংশ সকলেই পড়ুয়া। আশা করি তারা প্রকৃত বইপ্রেমী। আমার বক্তব্যের যথার্থ মানে বুঝতে পারবেন তারা, ভুল ব্যাখা করবেন না।
এরপর কোন বইয়ের সাথে টিভি, ফ্রিজ, সেলফি, অটোগ্রাফ, ডিনার, কফি, মগ, মাস্ক প্রাপ্তির লোভনীয় প্রস্তাবনায় আমন্ত্রণ করে আমাকে লোভের পথে প্ররোচিত করবেন না। আমাকে আবেগী থাকতে দিন, কঠিন বাস্তবতায় ডুবতে চাই না।
দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com