জীবনের প্রয়োজনে ঠিকানা বদলাতে হয়েছে বহুবার। সেইসব ঠিকানা এখন আর মনে নেই। হয়তো, অনেক ঠিকানাই এখন আর নেই! যেখানেই গিয়েছি, সবার আগে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়েছে ওই এলাকার খাকি পোশাকের একটি মানুষের সাথে। তিনি স্থানীয় সরকারি ডাকপিয়ন।
এমন কোনো সপ্তা ছিল না, আমার নামে দু-চারটি চিঠি আসত না। এমনও হয়েছে, একই দিনে এসে পড়েছে দুই-তিনটি চিঠি!
কী আনন্দ ছিল হলুদ খামের সেই চিঠিটি হাতে পাওয়ার! চিঠি হাতে নিয়েই যেন সেই মানুষটিকে আমি দেখতে পেতাম। তার স্পর্শ অনুভব করতাম।
এই তো হাতে নিল একটি কলম। ডায়েরির পাতাটা ওলটাল সে। তারপর গোটা গোটা অক্ষরে লিখল একটি নাম, ‘প্রিয় চাণক্য…’! ‘ইতি’ দিয়ে শেষ হলো চিঠি। তারপর (যদি থাকে) ‘পুনশ্চ’ অথবা, ‘বি.দ্র.’ অথবা, ‘মনে থাকে যেন’!
সবশেষে আলগোছ ভাঁজ করা হলো চিঠিটাকে। কত রকমের যে ছিল চিঠির ভাঁজ! আর কত যত্ন মিশে থাকত প্রতিটি ভাঁজে! হলুদ খামে ঠিকানা লেখা হলো। আঠা দিয়ে লাগানো হলো তার মুখ। পোস্ট অফিসে অথবা পথের ধারে লাল পোস্টবক্সে ছেড়ে দেওয়া হলো চিঠিটা।
এই প্রতিটি ঘটনা যেন আমি চাক্ষুষ করতে পারতাম। এরপর চিঠি পড়ার পালা। কোনো কোনো চিঠি একবার, দুইবার, তিনবার। কত রকমের চিঠি!
অভিমানের চিঠি
অনুযোগের চিঠি
অনুতাপের চিঠি
অনুভবের চিঠি
অকারণের চিঠি
কারণের চিঠি
ভালোবাসার চিঠি
হাজারো অজুহাতের চিঠি।
সেইসব স্মৃতিসিক্ত চিঠিগুলোর কিয়দংশ পেয়ে গেলাম আজ। আকস্মিক গৃহপরিচ্ছন্নতা অভিযানে। আর্কাইভিং বা সংরক্ষণে ভীষণ অপটু আমার ভাঁড়ারে কীভাবে যে এতগুলো দিন এই চিঠিগুলো থেকে গেল, ভেবে অবাক হলাম!
আহা! কত বিচিত্র রকমের মানুষের সাথে, মানুষীর সাথে, প্রতিষ্ঠানের সাথে পত্রযোগাযোগ ছিল আমার! জানি না, এই কালো অক্ষরের রচয়িতারা আজ কে কোথায়! কেমন আছে তারা! আবার যদি তাদের হৃদয় রক্তের কালিতে লেখা একটি করে চিঠি আমি পেতাম! অন্তরতল পূর্ণ হয়ে যেত। খুব আফসোস হলো, যত চিঠি পেয়েছি জীবনে, তার সব যদি পাওয়া যেত, কত বড় স্তূপ হতো তার! নিভৃতে কাঁচা আবেগ নেড়েচেড়ে দেখা যেত আবার!