অমৃতালোক
এখানে কার্তিকের মাঠে শুয়ে আছে
হলুদ গাভীন ক্ষেত
ডোরাকাটা নকশায় সবুজাভ রোদ
বহুদূরে হুইসেল বাজিয়ে আসে
ঈশা খাঁ বাড়ির অতিথি
জলাশয়ে বসে ছায়ার মতো ঢেউ
রোদ পোহায় অভিঘাতী ধানের শিষ;
চড়ুইদের সংসারে মায়ের কিচিরমিচির
বাবার আলোয়ানে মেতে ঘন কুয়াশার পরিখা
এখানে বৎসর বৎসর পার্বণের উৎসকথা
জানে না সন্তরণ আনন্দ সাগরের
নিশ্চয়ই বলে যায় উত্তরের বাতাসী কাল
দখিনা জানালার কাচে কানেকানে কথা
আমাদের জন্য জমা রেখো জীবন বহুকাল
তৃষিত মাটিতে গজিয়ে ওঠা নতুন ধানের সাজে…
স্বপ্নবেশ্যা
হাতের নখগুলো জমা রেখেছিলাম কালো চেক শার্টের পকেটে, কাচের ছুরা যেন দশটি। হাতের চুড়ি ভাঙলেই রক্তাক্ত ধবধবে সাদা বোতামগুলো; চোখের চশমাগুলো টেনে আনে কালো রেটিনা। লাল ঠোঁট আমার টেনে টেনে নেয় শরৎ কালের হলুদ করোটি সমেত ধোঁয়া। জানি আমাকে টেনে নেয় তাদের অন্য সভ্যতা। আমিও বেঁচে থাকি স্বপ্নবেশ্যার মতো।
আদৃত সমাদৃত
এবং, কাল সূর্যমুখী বরাবর চিঠি আসবে
আমার থাকা অথবা না থাকা কতটা!
কেউ এসে নিশ্চয়ই বলবে-
সে তো হিজল ছোঁয়নি গন্ধের জবাবে
মাটি মেখে দেখেনি গন্ধবণিকের দরজায়
তামা গলিয়ে আবিষ্কার করেনি সুড়ঙ্গ
ডুমুরের লাল ভিতর ঠুকরে পায়নি স্বাদটা
কলাবতীর ঘর ভাঙেনি পূজার রহস্যে
আরও যায়নি মাংসের অধিক সামাজিক সমতায়
হৃদয় থেকে খুবলে আনেনি সতত ডাকবাকশো
গির্জার ঘণ্টায় মাতেনি, আযানেও নয়
এমনকি মন্দিরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে গুণেনি
বুদ্ধের সমবিহার;
চিঠির জবাবে জেগে রবে মা
প্রেমিক জানাবে অহিংস পদাবলী
বন্ধুর বাতায়ন ঝুলে থাকবে নতুন চিঠি-
আমার থাকা অথবা না থাকা কতটা!
তাদের ছায়াশরীর দেখে আমি এখনো থাকি
তাদের প্রেমে দেখি ছিটকে আসে
আমায় দহানোর হাহাকার নামখানি –
বেমানান লাগে নিজেকেও
জেগে থাকে আমার মৃত্যুর দিন
অসম্ভব না পাওয়ার কিছু ছবি সেঁটে রয় লাল জামায়
আমি মেপে রাখছিলাম বেদনাদের
পারদপাত্র আর সবুজ সিন্দুকের ডালায়
প্রতীক্ষিত ক্রান্তিকালের সমপরিমাণে-
পেছনে রেখেছি সমস্ত শরীর
আত্মায় ভর করবো পরবর্তী পাণ্ডুলিপিটি।
যেহেতু যাইনি কোথাও
ফেরার এমন ভণিতা নেই
সারসের সংবেদী ডানা জানে না কতদূর
মচ্ছোৎসবের এমন পালা;
গিলতে শিখছি আপাতত
রেজারের ঝকঝকে রেতে-
সুন্দরের অধিক লোভে জেনে রাখছি
কুৎসিতও কত সুন্দর হয়!
দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com