দেশের বইয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন পাঁচটি প্রশ্ন। লেখক-প্রকাশকের কাছে বই প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্নগুলো করা। আজকের পাঁচটি প্রশ্ন আয়োজনে আমরা মুখোমুখি হয়েছি নবাগত কবি – শব্দনীল-এর
প্রশ্ন ১। প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
২০১৪ থেকে চেষ্টা করছি একক গ্রন্থ করার। কিন্তু বারবার নিজের কাছে নিজেই হেরে গেছি। অন্যদিকে বেখেয়ালি মানুষ হওয়ায় অনেক কবিতা নষ্টও করেছি। নষ্টের দোষ কিছুটা হাল্কা করার জন্য ২০১৮তে এসে ‘বিবর্ণ বসন্ত’ কাব্যসংকলন সম্পাদনা করি। যতটা তৃপ্তি পাওয়ার কথা ততটা পাইনি।
গর্ভ থেকে নবজাতক বের হয়ে প্রথম মায়ের চোখের সামনে আসলে মা যে তৃপ্তি পায় তা পেয়েছি ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর ‘ভাদি পুঁটির ঝাঁক’ এর মধ্যে। এ এক অদ্ভূত অনুভূতি। বলা যায়, ক্যালেন্ডারের পৃষ্টার ভাঁজে চলে যওয়া প্রথম মানুষের হাত, অনেক অনেক বিকেল বিসর্জন দিয়ে নতুন করে ধরতে পারার মতো!
প্রশ্ন ২। লেখালেখির ইচ্ছেটা কেনো হলো?
লেখালেখির ইচ্ছে কেনো হলো এবিষয়ে এক কথায় বলা মুশকিল। অনেক প্রশ্নের উত্তর সহজে বলা যায় না। আপনার মনে হবে, আরে এটা তো আমি জানি! কিন্তু বলতে বা প্রকাশের কোনও শব্দ বা মাধ্যম খু্ঁজে পাবেন না আপনি। আমি নিজের ভেতরে থাকতে পছন্দ করি। তবে শৈশব থেকে না, প্রকৃতির ছোট ছোট অনুভূতি, সম্পর্কের মায়া, ভাঙ্গাগড়া আমার ভেতরে গভীর স্পন্দন তুলতো।
ন্যায়-অন্যায় দেখলেও কিন্তু আমি কাউকেই এই বিষয়ে কিছু বলতে পারতাম না, এখনও পারি না। সেজন্য এই ছোট ছোট অনুভূতি ধরেন, বাঁশ ঝাড়ের ফাঁক গলে রোদ উঠান স্পর্শ করে। আমি দেখি এই রোদ নিজের স্থান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে কতটা কষ্টে করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এক ধরণের বিস্ময়। এক ধরণের মুগ্ধতা। এই অনুভূতি সকলকে কি করে বুঝাব বলুন। আমাকে তো পাগল ভাববে। কিন্তু প্রকাশের তীব্র ইচ্ছাও ভেতরে আলোড়ন তোলে। মধ্যবিত্ত সংসারের মতো (হা-হা-হা)।
এক সময় বুঝতে পাড়লাম অব্যক্ত কথাগুলো নিয়ে নিজের সঙ্গে নিজে বিড়বিড় করি। এখান থেকে মুক্তি পেতে আমি লেখা শুরু করি। বলা যায় কিছুটা হলেও নিজের জন্য লেখা শুরু করি তবে এখনও বিড়বিড় করা বন্ধ হয়নি।
প্রশ্ন ৩। লেখক জীবনের মজার কোনো অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
লিখতে শুরু করেছি কদিন হলো মাত্র। মজার ঘটনা কি করে হবে বলুন। তবে শুরুর একটি ঘটনা বলি- যখন আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, আমার খুব কাছের বন্ধু সিনিয়র এক আপুর প্রেমে পড়ে। স্কুলে আসলেই তার একটাই কাজ ছিলো আমার পাশে বসে, চিঠি লেখার আবদার করা। তার ভেতরে বিশ্বাস ছিল আমি বিভিন্ন ধরণের বই পড়ি। তার মানে আমি দারুণ চিঠি লিখতে পারি।
তার এই বিশ্বাস ভাঙ্গতে চিঠি লেখা শুরু করি। এই বিষয়টি আর গোপন থাকে না। রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উপশহর মাঠ এবং এমইএচ মাঠের সিনিয়রদের মধ্যে চিঠি লেখার বিষয়টি পৌঁছে যায়। মাঠে গেলেই খুব গোপনে আবদার আশা শুরু হয় আমার কাছে। আমি কখনও বিনা পয়সায় হলে মুভি দেখার লোভে, কখনও ডিম মোগলাই খাওয়ার লোভে, কখনও আগে বেটিং পাওয়ার লোভে চিঠি লিখতাম।
প্রশ্ন ৪। বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
বাংলাদেশের সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলবে মূলত সাহিত্য বোদ্ধারা। আমি সাধারণ একজন মানুষ। নিজের জন্য লেখি। এই বিষয়ে বললে ছোটমুখে বড় কথা হবে। পিছনে ফিরে তাকানোর সময় তো নেই, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এই এগিয়ে যাওয়া মনে এই নয়, ইউরোপ-আমেরিকা বা পশ্চিমা সাহিত্য বলেন তার বলয়ের ভেতরে থেকে বা অনুকরণ করে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের সাহিত্যের নিজস্ব একটি প্যাটার্ন আছে, কারণে-অকারণে মনে হয় এই প্যাটার্নকে আমরা উপেক্ষা করি বা সস্তা গোছের মনে করি। যার জন্য নিজস্বতাকে বিসর্জন দিয়ে অনুকরণ প্রিয় হয়ে উঠি।
ধারকরা অলঙ্কার কতটুকু বা সৌন্দর্য বিস্তার করতে পারে বলুন? তবে কেউ করছে না তা বলব না। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এই ঘাটতি হয় তো একদিন পূরণ হবে অথবা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আরও নষ্ট হবে।
আপনি কতদিন পারবেন পেটে ভাত না দিয়ে, কাজ করার শক্তি যোগাতে! দুদিন-চার দিন তারপর? আমি বিশ্বাস করি সৃজনশীল লেখালেখির ভবিষ্যৎ পৃষ্ঠপোষকতার উপর নির্ভর করে। যদি তা না হয়, ঠেলাগাড়ি তো আছেই। এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম ঠেলেই যাবে। তবুও আমি আশাবাদী মানুষ।
প্রশ্ন ৫। লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন?
আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি, ৩০২১ সালের এক টগবগে আমার মতোই তরুণ, আমাকে কি মনে রাখবে? অথবা আমার লেখা কোনও একটি বাক্য পড়বে? যদিও স্ব-শরীরে সে সময়ে আমার থাকার কথা নয়, তবুও তার কাছে পৌঁছাতে চাই।
দেশের বই পোর্টালে লেখা ও খবর পাঠাবার ঠিকানা : desherboi@gmail.com