ইমাম গাজ্জালির মৃত্যুর সময় আর শেষ পংক্তিগুলো
প্রতিদিনের মত এক ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়লেন ইমাম গাজ্জালি। জানতে চাইলেন আজ কী বার। জবাব দিলেন তাঁর ছোট ভাই আহমেদ গাজ্জালি— “সোমবার ভাইজান”।
ছোট ভাইকে বললেন (আগে রেডি রাখা কাফন) শাদা কাফনটি এনে দিতে। আদর দিয়ে কাফনটিকে তিনি নিজেই ঢাকলেন নিজেকে, আর উচ্চারণ করলেন— “মালিক, আমি স্বেচ্ছায় অনুগত হলাম।” তারপর শেষ নিঃশ্বাস।
তাঁর বালিশের নীচে পাওয়া গেল কিছু পংক্তি। সম্ভবত রাতেই লিখেছিলেন।
“বন্ধুদের বলবে, যখন তারা কাঁদবে আমার জন্যে,
বেদনায় নীল তারা শোক জানাবে
মৃত দেখে আমাকে।
না না, এই মরদেহ আমি না, বিশ্বাস কর, আমি না,
আল্লাহর নাম নিয়ে বলি, এইটা আমি না।
আমি রুহ। এইটা শূন্য, মাংস ছাড়া কিছু না।
এইটা আমার ঘর ছিল, একটা সময়ের পোশাক ছিল,
আমি এক মাদুলিতে লুকাই রাখা মূল্যবান সম্পদ,
ধুলের তৈরী একটা পবিত্র ঘর আমাকে খেদমত দিয়েছে,
আমি খোসা ছেড়ে যাওয়া এক মুক্তা,
আর ধরতে পার, পাখি আমি, এই দেহ ছিল পাখির বাসা,
যেখান থেকে আমি এখন উড়ে গেলাম, আর এই দেহ-ঘর এক চিহ্ন,
প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে মুক্ত করে দিলেন,
আমার জন্যে রাখলেন উর্ধ্বলোকের একটি সর্বোচ্চ স্থান।
আজ পর্যন্ত মরা আসলে ছিলাম, যদিও তোমরা জান জিন্দা।
এখন আমি সত্যের মাঝে বাঁচতেছি কবর-কাফন ছুঁড়ে ফেলে।
উর্ধ্বলোকের সাধু-জ্ঞানীদের সাথে আলাপ করেছি আজ,
কোনো পর্দা নাই মাঝখানে। খোদাকে দেখলাম সরাসরি।
লাওহে মাহফুজ দেখলাম আর পড়লাম,
যা ছিল, আছে আর যা আসতে থাকবে।
আমার দেহ-ঘর ধ্বসে পড়া স্তুপ হতে দাও, পিঞ্জরটা মাটিতে নামাই রাখ,
মাদুলিটা ফেলে দাও, এইটা একটা চিহ্ন মাত্র,
আমার জোব্বা রাখ, ওইটা আমার বহিরাঙ্গের পোশাক,
ওসব বিস্মৃত হতে দাও, ওসব কবরে রাখ,
আমি আমার পথে গেলাম, তোমরা পিছে আছ,
তোমাদের থাকবার ঘরে আমার বাস ছিল না।
মনে কর না মৃত্যু মানেই মৃত্যু, না, এটা জীবন
এমন এক জীবন, ইহজীবনের স্বপ্নেরও অধিক,
দুনিয়ার জীবনে আমদের জন্যে ঘুম অনুমোদিত,
মৃত্যু ধরো ঘুম, সম্প্রসারিত ঘুম,
মৃত্যু কাছে আসতে থাকলে ভয় পাইও না,
এইটা মনোরম ঘরে যেতে বিদায় লওয়া,
তোমার মাওলার কৃপা ও ভালবাসার কথা ভাবতে থাক,
তাঁর অনুগ্রহের ধন্যবাদ জানাও, নির্ভয়ে আস।
এখন আমি যা হলাম, তোমরাও এমন হবে,
মনে হয় এইটুক যে, আমি যা তোমরাও তা,
খোদার কাছ থেকেই আসে সব মানুষের রুহ,
সকল মানুষের শরীর অভিন্ন প্রকৌশলে গড়া,
এই যেমন আমাদের সাথে একজাই করা ভাল ও মন্দ।
এখন তোমাদের দেই একটি ভাল আনন্দ সংবাদ,
খোদার শান্তি ও আনন্দ বেশি-বেশি থাক তোমাদের জন্যে।”